টাঙ্গাইলে পাটের বাম্পার ফলন: কৃষকের মুখে হাসি 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : জেলায়  চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠি বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। পাটের আশানুরূপ ফলন ও রোগবালাই কম হওয়ায় এ বছর সোনালী স্বপ্নের আশায় ব্যস্ত সময় পার করছে টাঙ্গাইলের পাট চাষিরা।
জেলার ১২টি উপজেলার গ্রামাঞ্চলের খাল, বিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে চলছে পাট জাগ, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের মহাযজ্ঞ। শ্রাবণ ধারার সঙ্গে মিতালী করে গ্রামীণ জনপদে কৃষাণ-কৃষাণীরা মেতে উঠেছেন পাট উৎসবে। সোনালী আশেঁ রং বদলাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাট চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৮১৮ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬১ হেক্টরে। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ বেল। গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এ বছর দেশী তোষা, কেনাফ, মেস্তা জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে ভূঞাপুর এবং সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে ধনবাড়ী উপজেলায়।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর ও দেলদুয়ারের বিভিন্ন গ্রামঅঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, পাট চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ব্যস্ত জমি থেকে পাট কাটায়, কেউবা ব্যস্ত পানিতে জাগ দেওয়ায়, আবার কেউ কেউ পাট ধৌত করতে, কেউবা আবার ব্যস্ত পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এ কাজে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে নারীদের এ কাজে দেখা গেছে। এরই মধ্যে অনেকেই ভালো দামে বিক্রিও করছেন। বাজারে পাটের দামও ভালো পাওয়ায় তারা বেশ খুশি। মোট কথা ধীরে ধীরে আবার সোনালী আঁশের রাজত্ব ফিরে আসছে। সব মিলিয়ে এখন গ্রামাঞ্চলে চলছে পাটের মহাযজ্ঞ।
দেলদুয়ার উপজেলার বরুহা গ্রামের পাট চাষী হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি প্রায় ৫০ মণ পাট পাবো। প্রায় ১ লক্ষ টাকায় পাটশোলা বিক্রি করতে পারবো। শুরুর দিকে পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন পানি আসায় পাট জাগ দেয়া সহজ হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত কিছু পাট বিক্রি করেছি ২ হাজার ৮ শত টাকা মণ দরে। এ বছর বোরো ধানের চেয়ে পাটের আবাদ ভালো হয়েছে।
oplus_2
দেলদুয়ার উপজেলা সিলিমপুর গ্রামের পাট চাষি লতিফ মিয়া বলেন, এ বছর আমি ৬ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। প্রায় ৬০ মন পাট পাবো।  প্রতি মন পাট গড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। স্থানীয় উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সব সময় আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমাদের এই বাজারে প্রতি শুক্রবার হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় ১ হাজার মণ পাট ক্রয়-বিক্রয় করা হয়ে থাকে। আগামীতে আমি আরও জমিতে পাটের আবাদ বাড়াবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভাল পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন পাট চাষিরা। এ বছর টাঙ্গাইলের চাষিরা রবি-১, কেনাফ ও তোষা জাতের পাট বেশি আবাদ করে । দেশীয় পাটের মধ্যে রবি-১ জাতটি সবচেয়ে ভালো। এই জাতটি এবার প্রণোদনা মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ জন কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাটের বাজার মূল্য বেশি থাকায় পাট চাষে কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। আমরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ হতে পাট চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রণোদনা, বিনা মূল্যে বীজ বিতরণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে জেলায় পাটের আবাদ বৃদ্ধিতে সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *