ষ্টাফ রিপোর্টার:
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে এ বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। জমে উঠেছে জাতীয় ফল কাঁঠালেরন বাজার। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসছে কাঁঠাল কিনতে। আনারসের মতো গড় অঞ্চলের কাঁঠালের সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কৃষকের বাজারজাতকরণ ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পোষাতে পারছে না চাষীরা। অন্যান্য ফলের চেয়ে রসালো ফল কাঁঠালের দাম তুলনামূলক ভাবে কম থাকায় বাড়ছে না কাঁঠাল চাষ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, এ এলাকায় যুগ যুগ ধরে কাঁঠাল চাষ হয়ে আসছে। উন্নত ও নিরাপদ চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লার মাটির এ গড়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমানে কাঁঠাল চাষ হয়ে থাকে। পাহাড়িয়া এলাকার বনাঞ্চল অধূষিত গারোবাজার থেকে শোলাকুড়ি পর্যন্ত উঁচু এলাকায় বেশি আর নিচু অংশে কিছুটা কম চাষ হয়।তবে মাটির গুনা গুনের কারণে তুলনামূলক ভাবে এ অঞ্চলের কাঁঠালের স্বাদ রস বেশি হয়ে থাকে। এবছর এ অঞ্চলে ১৭০ হেক্টর এরিয়ায় কাঁঠাল চাষ হয়েছে। উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১শ ২০ মে.টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গড়ের লাল মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য আবহাওয়া প্রকৃতি পরিবেশ বিশেষ উপযোগি। প্রতি বছরের মতো এবারও ফলন ভালো হয়েছে। এ অঞ্চলের জলছত্র পঁচিশ মাইল হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার। রাজধানী ঢাকা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা,জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার কৃষক, পাইকার, ফড়িয়ারা এ বাজারে কাঁঠাল কিনতে আসে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিদিন এ বাজারে কাঁঠাল বেচাকেনা হয়ে থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে ক্রেতারও কোন কমতি নেই। দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এ বাজারের কাঁঠাল। বাজারে প্রকারভেদে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে কাঁঠাল। তবে বাজারজাতকরণ,শ্রমিক মজুরি, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা জানিয়েছে। পাইকাররা জানালেন,এ এলাকার কাঁঠালের গুণগত মান ভালো থাকায় দেশ জুড়ে রয়েছে চাহিদা।অন্যান্য ফলের দাম যে হারে বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না কাঁঠালের দাম। ফলে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা এমনটাই জানালেন কৃষক ও পাইকাররা। আব্দুল লতিফ (৩৯) জানান, সে ঘুরে ঘুরে কাঁঠাল কিনে এ বাজারে দঁই তিন পর পর বিক্রি করে। এক অটোরিকশা কাঁঠাল এনে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করেছে। জলিল মিয়া (৫৫) জানান, তারা কয়েকজনে মিলে জামালপুর সরিষাবাড়ি মাদারগঞ্জ থেকে কাঁঠাল কিনে এনে এ বাজারে বিক্রি করে। শরীফ মিয়া (৪০) জানান, আশপাশের কয়েক জেলার মধ্যে এ বাজারই কাঁঠালের বড় বাজার। প্রতিদিন এ বাজারে কাঁঠাল বেচাকেনা হয়। কয়েকজন পাইকার ক্রেতা জানান, তারা অনেক বছর যাবত এ বাজার থেকে আনারসের সাথে কাঁঠাল কিনে গাড়ি মিল করে নিয়ে যায়। একই বাজারে কাঁঠাল ও আনারস বিক্রি করতে সুবিধা হয়।তবে কাঁঠালের দাম এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো। বাজার কমিটির ফারুক হোসেন (৩৫) তারা বাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ খাজনা আদায় করার জন্য এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছে। তারমতে, প্রতিদিন এ বাজার থেকে ১০/১৫ ট্রাক কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাগম ঘটে থাকে। থাকা খাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে প্রতি বছর বাজারটি জমে উঠে। কৃষি সম্প্রসম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাসবিনূর রাত্রী ও খায়রুল ইসলাম বলেন, মধুপরে বহু থেকে কাঁঠাল চাষ হয়ে আসছে। এবছর এ অঞ্চলে ১৭০ হেক্টর এরিয়ায় কাঁঠাল চাষ হয়েছে। উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১শ ২০ মে.টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩৮-৪০ মে. টন। মধুপুরের পঁচিশ মাইল, মোটের বাজার, গারোবাজার থেকে কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। মধুপুরকে আনারসের রাজধানী বলা হলেও এ এলাকায় উর্বর লাল মাটিতে উৎপাদিত কাঁঠালের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কমছে চাষ। বাজারের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও কাঁঠাল কে কেন্দ্র করে শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে বাড়বে কাঁঠালের চাহিদা, বাড়বে দাম, বাড়বে কাঁঠালের চাষ । এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।